উপস্থিত বক্তৃতা আকর্ষনীয়ভাবে শুরু করার কয়েকটি নমুনা

উপস্থিত বক্তৃতার শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রথম ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই আপনাকে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হয়। একটি চমৎকার সূচনা আপনার বক্তব্যের ভিত্তি স্থাপন করে দেয় এবং শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি কার্যকর নমুনা দেওয়া হলো যা আপনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করতে পারেন।

১. প্রশ্ন দিয়ে শুরু

শ্রোতাদের সরাসরি কোনো প্রশ্ন করে выступಿಕೆ শুরু করলে তারা মানসিকভাবে আপনার আলোচনায় যুক্ত হয়ে পড়েন।

  • নমুনা ১ (সাধারণ বিষয়): “আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসগুলো কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে?”
  • নমুনা ২ (অনুপ্রেরণামূলক): “আমরা সবাই কি জীবনে সফল হতে চাই? কিন্তু সফলতা আসলে কী, তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?”
  • নমুনা ৩ (সামাজিক বিষয়): “আচ্ছা, এমন একটি সমাজের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি যেখানে কোনো দুর্নীতি নেই?”

২. একটি চমকপ্রদ তথ্য বা পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু

কোনো আশ্চর্যজনক তথ্য দিয়ে শুরু করলে তা মুহূর্তের মধ্যে শ্রোতাদের কৌতূহলী করে তোলে।

  • নমুনা ১: “জানেন কি, পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ কোটি প্লাস্টিকের বর্জ্য সাগরে গিয়ে মেশে? আজ আমি এই ভয়াবহ দূষণ এবং আমাদের করণীয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি।”
  • নমুনা ২: “গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট বই পড়েন, তাদের মানসিক চাপ অন্যদের তুলনায় ৬৮ শতাংশ কমে যায়। চলুন, আজ বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা যাক।”

৩. একটি প্রাসঙ্গিক গল্প বা ঘটনা দিয়ে শুরু

গল্প মানুষের মনকে সহজেই স্পর্শ করে। নিজের জীবনের কোনো ছোট ঘটনা বা অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক গল্প দিয়ে বক্তব্য শুরু করতে পারেন।

  • নমুনা ১: “গতকাল আমি বাজারে যাওয়ার পথে দেখলাম একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক গাছের চারা লাগাচ্ছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই বয়সে কেন এত কষ্ট করছেন?’ তিনি হেসে উত্তর দিলেন, ‘এই গাছের ছায়ায় আমি হয়তো বসবো না, কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো বসবে।’ এই ঘটনাটিই আমাকে আজ ‘পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব’ বিষয়ে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করেছে।”
  • নমুনা ২: “আমার মনে আছে, ছোটবেলায় আমি একবার দৌড় প্রতিযোগিতায় একদম শেষ হয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘শেষ হওয়াটা লজ্জার নয়, দৌড় শুরু না করাটাই লজ্জার।’ আজ আমি ‘ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা’ নিয়ে কিছু কথা বলব।”

৪. বিখ্যাত কোনো উক্তি বা কবিতার লাইন দিয়ে শুরু

বিষয়বস্তুর সাথে মিলে যায় এমন কোনো বিখ্যাত উক্তি বা কবিতার লাইন আপনার বক্তব্যের গাম্ভীর্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • নমুনা ১: “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়।’ আজ আমি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।”
  • নমুনা ২: “নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন, ‘শিক্ষা হলো সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র যা দিয়ে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায়।’ চলুন, এই অস্ত্রের সঠিক ব্যবহার নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করি।”

৫. সরাসরি বিষয়ের গভীরে প্রবেশ

কোনো রকম ভূমিকা না করে সরাসরি মূল বিষয়ে চলে যাওয়াটাও অনেক সময় বেশ কার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে যদি সময় কম থাকে।

  • নমুনা ১: “আজকের এই সমাবেশে আমার আলোচনার বিষয় হলো ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের ভবিষ্যৎ’। এটি এখন আর কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।”
  • নমুনা ২: “ডিজিটাল বাংলাদেশ—এই শব্দ দুটি এখন আমাদের সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু এর প্রকৃত সুবিধা আমরা কতটা নিতে পারছি? আমি আজ এই বিষয়েই আলোকপাত করব।”

আনুষ্ঠানিক সম্বোধন (Formal Address)

যেকোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুরু করার আগে অবশ্যই মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্বোধন করে নিতে হবে।

নমুনা: “আজকের এই মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাননীয় সভাপতি, মঞ্চে উপবিষ্ট শ্রদ্ধেয় প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, আমার সামনে উপস্থিত সুধীমণ্ডলী এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সালাম। আসসালামু আলাইকুম।”

মনে রাখবেন, আপনার বক্তব্যের বিষয়বস্তু এবং শ্রোতাদের ধরন অনুযায়ী সবচেয়ে উপযুক্ত নমুনাটি বেছে নিতে হবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে একটি সুন্দর সূচনা আপনার উপস্থিত বক্তৃতাকে সফল করতে অনেকাংশে সাহায্য করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top